গ্রেমাইন্ড পাবলিকেশন থেকে একটা নিয়মিত ম্যাগাজিনের কথা ভাবা হচ্ছিল অনেকদিন ধরেই। যেহেতু আমাদের যোগাযোগ, কাজকর্মের একটা বড় দিক খেলাধুলা, তাই স্পোর্টস ম্যাগাজিনের প্রস্তাব এল বিস্তর। আমি রাজি ছিলাম না। কারণটা সহজ। প্রতিদিনের খবরের কাগজে কিংবা টিভিতে এখন খেলাধুলার খবর এতটাই গুরুত্ব পায় যে নতুন করে তা নিয়ে মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করাটা বাহুল্য বলেই মনে হয়। বরং একটা শূন্যস্থান পাচ্ছিলাম, ফুড। মানুষের নিত্য প্রয়োজনে, বেঁচে থাকা থেকে শৌখিনতা, নেশা, স্বাদের একটা বিরাট দুনিয়া একেবারে ‘আনটাচড’। বাংলা পত্রিকার দুনিয়ায় রাজনীতি, খেলাধুলা, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, জীবিকা, বয়সসন্ধি সব পাবেন, কিন্তু শুধুই খাবার নিয়ে কিচ্ছু নেই।
অথচ, ফুড ইন্ডাস্ট্রিটা প্রতিদিনই বাড়ছে। রেস্তোরাঁ বাড়ছে, ফুডচেন বাড়ছে, ভাল খাবারের উপকরণ, সরঞ্জাম সবকিছু বাড়ছে প্রতিদিনই। কোনও শনি কিংবা রবিবারের সন্ধেয় শহরের কোনও শপিং মলের ফুডকোর্টে চলে আসুন। বসার জায়গা পাবেন না। এত ভিড়।
এত মানুষের আগ্রহ, পছন্দ, রসনা, ডে আউটের কোনও নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকবে না! ভোজনরসিক বাঙালি যার পাতা ওল্টালেই পেয়ে যাবে নানান স্বাদের গন্তব্য। কিংবা ডুব দেবে রসনার নস্টালজিয়ায়, কিংবা মেতে উঠবে নতুন খাবার আবিষ্কারের আনন্দে। এই ভাবনা থেকেই হ্যাংলা। হ্যাংলা হেঁশেল।
আমার নিজের খাওয়ার প্রতি ভালবাসাটা আদি ও অকৃত্রিম। সে ছোটবেলায় বাড়ির ফ্রিজ থেকে মিল্কমেডের কৌটো একেবারে ভ্যানিশ করে দেওয়া থেকে পেশার প্রয়োজনে লাহোরের ফুড স্ট্রিটে রাতের পর রাত কাটিয়ে দেওয়া- সবটাই ওই সুখাদ্যের সন্ধানেই। আর এই খোঁজ যেন প্রতিনিয়ত চলছে। হ্যাংলা শুধু দেখাটা বদলে দিল। একবারে এনে ফেললে ফুড দুনিয়ার বিশাল সমুদ্রে।
কলকাতায় গাঁজা পার্কের ঠিক পাশে রেওয়াজি খাসির মাংস ভাজা পাওয়া যেত। ফুটন্ত তাওয়া থেকে মাংস তুলে মশলা ছড়িয়ে শালপাতায় পরিবেশন হত। কালের নিয়মে আপাতত উধাও ওই দোকান। আর দেখতে পাই না। কিংবা বিদ্যাসাগর কলেজের কাছে বিধান সরণির ওপর দইয়ের লসি আর ফ্রুট কেক। যত গরম বাড়ে লস্যি খাওয়ার জন্য মানুষের লাইন তত দীর্ঘ হয়। কলকাতার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে এরকম অনেক বিস্ময়। এই শহরের স্কাইলাইন যত বদলাচ্ছে, তত বদলাচ্ছে এ-সবও। নতুন নতুন স্বাদের আসা যাওয়া এখানেই কত। কলকাতায় এখন পাওয়া যায় ইটালিয়ান, মেক্সিকান ফুডও। অথচ, তার সঙ্গে সমানে চলছে মিত্র কাফে কিংবা অনাদি কেবিনও।
তবে আপশোস একটাই। এত সম্পদ, গর্ব থাকা সত্ত্বেও বাঙালির খাবার কখনও বিশ্বজনীন হল না। আজ হলদিরামের শোনপাপড়ি যদি দুনিয়াব্যাপী ব্যবসা করতে পারে, তা হলে কে সি দাশের রসগোল্লা কিংবা ভীমনাগ-নকুড়ের সন্দেশ গ্লোবাল ব্র্যান্ড হতে পারত না, এটা বিশ্বাসই করি না। কোয়ালিটি কিংবা ব্র্যান্ড ইমেজ কোনওটাতে এরা পিছিয়ে ছিল না। আসলে বাঙালি বহির্বিশ্বটা নিয়ে ভাবেইনি আগে।
নতুন বাঙালি অবশ্য ভাবছে। ওপার বাংলার ফকরুদ্দিনের বিরিয়ানি আপনি পাবেন লন্ডনেও। এপারের সিরাজকে পেয়ে যাবেন দুবাইয়ে। কলকাতার এক বঙ্গসন্তান খোদ চীনাদেশ খুলে ফেলেছেন ‘মেনল্যান্ড চায়না’। বাঙালি খাবারকে পৌঁছে দিচ্ছেন দেশের আনাচে কানাচে। ফুড কোম্পানির শেয়ার ছাড়ছেন। তাও সুপারহিট।
বাঙালির খাবারের এই বিশ্বায়নের কাজেই শামিল হতে চায় ‘হ্যাংলা’।
গোটা বিশ্বের রসনাকে বাঙালির পাতে এনে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির খাবারকেও আমরা পৌঁছে দিতে চাই গোটা পৃথিবীতে।
আমরা কয়েকজন ‘হ্যাংলা’ মিলে এটুকু ভেবেছি। বাকিটা আমাদের সবাইকে মিলে করতে হবে। তাই দুনিয়ার যত হ্যাংলা আছেন, সবাই আমাদের সঙ্গে যোগ দিন। স্বাদ, গন্ধ আর জিভে জলের বন্যা দিয়ে গোটা পৃথিবীটা বদলে দিতে পারি আমরাই। হ্যাংলা পার্টি জিন্দাবাদ।
Editorial : হ্যাংলা পার্টি জিন্দাবাদ
Read Time:5 Minute, 45 Second