হ্যাংলা চলল রাজবাড়ি!
বুঝলি সে বিশাল খাওয়া দাওয়া ! উফফ !! পাত শেষই হচ্ছে না! একটার পর একটা ডিশ! এক সে বড়কর এক রান্না!! খেতে খেতেই লোকে হাঁফিয়ে যেত! আবার বিশ্রাম নিয়ে খেত! সকাল থেকে রাত অবধি লোকে খাচ্ছে তো খাচ্ছেই ! আবার ওপরে নহবতখানায় বসেছে জলসাঘর ! বিখ্যাত সব গাইয়ে নাচিয়েরা এসে হাজির ! সারা রাত চলবে মজলিস! এসবের আলাদা জমক! তোদের আর কী বলব? এতটা বলে বিশুদা একটা ইস্পেশাল বিড়ি ধরালো! বিশুদা কে চেনা যাচ্ছে না? আরে আমাদের হ্যাংলা ক্লাব সেক্ক্রেটারি। তবে খুলেই বলি, এই শীতে অনেকেই এদিক ওদিক পিকনিক করতে গিয়েছিল, আজ আমাদের আড্ডাতে সেসব নিয়ে চুলচেরা আলোচনা হচ্ছে! সব্বাই সবার পিকনিকের কথা বলছে, তাই বিশুদারও কথা জানতে চাওয়া হয়েছিল!! তা এমন কথা শোনালো যে সবার আক্কেল গুড়ুম । দেবা সাহস করে জানতে চেয়েছিল কোন জমিদার বাড়িতে বিশুদা খেয়ে এসেছে? দেবার দিকে এমন চোখ করে তাকালো মনে হল যেন জর্জ বুশকে জুতোর ফিতে বাঁধতে বলা হয়েছে!
তারপর বিশুদা! আর কী ছিল? আরে দাঁড়া না ঘোড়ার ডিম! বিড়িটা শেষ করতে দে! তোদের জন্যেও ভাল খবর আছে!! বেশ জমাটি খবর ! বিশুদা বললে হবে কী? আমাদের তো উৎসাহ বাগ মানছে না! বিশুদা গুল মারুক আর যাই করুক না কেন হ্যাংলা ক্লাব নিয়ে বেকার বকার পাবলিক না!
আচ্ছা তোরা বলতে পারিস? কলকাতার কোন জমিদার বা রাজবাড়িতে সুবা বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লার পতনের বছর দূর্গা পুজো শুরু হয়েছিল? কোন জমিদার বাড়িতে রবার্ট ক্লাইভ দূর্গা পূজো দেখতে এসেছিলেন? শুধু ক্লাইভই না বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংস ও আসতেন? আচ্ছা আরো ক্লু দিচ্ছি! একই জায়গাতে দুখানা জমিদার বাড়ি! বড় বাড়ি আর ছোট বাড়ি!
এই দেবা বিশুদার বিড়িতে কী দেওয়া ছিল বল তো?এমন ধারা ইতিহাস নিয়ে আগে কোন দিন তো বলে নি! সন্দেহজনক! আরে দাঁড়া দাঁড়া!! কেসটা বুঝতে দে ! কী যে হচ্ছে! মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে!
সব কটা গাধা! বিশুদার সম্ভাষণ!! কাদেরকে নিয়ে বলছি বুঝতে পারছিস না? আর বোঝা! আমরা তো বেকুবের মত শুনে যাচ্ছি! কী আর বলব? আচ্ছা! রাজা নবকৃষ্ণ দেব স্ট্রিট কলকাতার কোথায় আছে সেটা কি বলতে পারবি? এর ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি ! ঠিকানাটা পেটে আসছে মুখে আসছে না!! উফফ!!! কী গেরোতে পড়েছি আমরা! বিশুদা যেন সুকুমার রায়ের “নোটবই” থেকে একের পর এক প্রশ্ন করছে! ধুর! কী সব যে আল ফাল বকছে!
আরে মাথামোটা গুলো! আমি শোভাবাজারের রাজবাড়ির কথা বলছি! বিশুদা চিল্লিয়ে উঠলো!
ও তাই বলো!! হ্যাঁ! তা কি হয়েছে? খোলসা করে বলো তো শুনি! তখন থেকে ইতিহাস শুনিয়ে মাথা খারাপ করে দিলে! শোনা যাক! মোদ্দা জিনিসটা বলো তো দিকি!
আরে মোদ্দা কথা হলো , আমি অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম তোরা পিকনিক করতে গাড়ী-বাস ভাড়া করে যাস ! অনেক জায়গাতে ঘুরিস! তা একটা ইতিহাস বিজড়িত জায়গাতে পিকনিক করলে কেমন হয়? তাই আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারি শোভাবাজার রাজবাড়িতে আমাদের হ্যাংলা ক্লাবের পিকনিক । বুঝলি! ‘মেজাজ টাই তো আসল রাজা, আমি রাজা নই’। তাই দেরি না করে ঠিক করে ফেললাম! শুভ কাজে দেরি করতে নেই! আর আমাদের হ্যাংলা ক্লাবের পিকনিক বলে কথা! তার ওপর তোদের মত সব কটা হ্যাংলা!
বিশুদা খাওয়া দাওয়া কী কী হচ্ছে? মানে মেনু গুলো কী কী? তবে তো আগের দিন পেট ক্লিয়ার করে নেবো! উফফ!! তোদের নিয়ে আর পারা গেল না! সে অনেক কিছুই থাকবে! একদম দস্তুর মতো পেট পুজোর আয়োজন ! সঙ্গে হবে আড্ডা! আর রাজবাড়ি বলে যখন কথা! তখন মজা হবে দেদার। গান বাজনাও হবে! তাকিয়া তে হেলান দিয়ে; “কাহারবা নয় দাদরা বাজাও”। গানে-নাচে নিজেদের ট্যালেন্ট জাহির করবেন আমাদের হ্যাংলা ক্লাবের বন্ধুরা ও আমাদের নতুন বন্ধুরা। রান্নার উপকরণকে বুদ্ধি করে কাজে লাগিয়ে সেজেগুজে র্যা ম্পে হাঁটবেন মহিলারা। থাকছে ডামশরাড আর মিউজিকাল চেয়ারও। আর সকলের সঙ্গে পায়ে পায়ে হেঁটে যাবে ইতিহাস, শোভাবাজার রাজবাড়ির। ১৭৫৭-২০১৬ সময় কাল টা তো কম কিছু নয়! বিস্তর জ্ঞান অর্জন করতে পারবি! বুঝেছিস? তবে কিছু সারপ্রাইজও থাকতে পারে । তাই সকাল ৯টার মধ্যে সব্বাই হাজির হয়ে যাবি বুঝেছিস? আসর যেন মাটি না হয়! না না বিশুদা! হ্যাংলা ক্লাব এর কি সম্মান নেই নাকি? তুমি চিন্তা করো না! সব্বাই চলে আসবো !
পিকনিকে ‘চার চাঁদ’ যুক্ত করতে হাজির থাকবেন শেফ দেবাশিস কুণ্ডু, শেফ জয়ন্ত ব্যানার্জি, জি বাংলা-খ্যাত সুদীপা মুখার্জি চ্যাটার্জি, রন্ধন বিশেষজ্ঞা শর্মিষ্ঠা দে, রন্ধন বিশেষজ্ঞা জয়শ্রী গাঙ্গুলি, রন্ধন বিশেষজ্ঞা বিপাশা মুখার্জি, রন্ধন বিশেষজ্ঞা শুভা চক্রবর্তী প্রমুখ। আর পিকনিকের সারাটা দিন জমিয়ে দিতে থাকবেন অভিনেত্রী তনিমা সেন। সত্যি-ই এলাহি ব্যাপার।
আচ্ছা তোমাদের আর একটা কথা বলে দি! পিকনিকে আসতে গেলে হ্যাংলা হেঁশেল মেম্বার দের 400/– আর রাঙ্গা পিসে, ফুল মাসি, অঞ্জনা পিসি মানে আমাদের মেম্বার যারা নন তাঁরাও আসবেন তবে সে ক্ষেত্রে 500/- ধরা হয়েছে! তা রাজবাড়িতে পিকনিক বলে কথা! মিস করলে আফশোষের শেষ থাকবে না!