নিরামিষ কথন!
কাল রাত থেকে শ্যামলদের বাড়িতে শুরু হয়েছে মহা উৎপাত। বড় শ্যামল অর্থাৎ শ্যামলের ঠাকুর্দা গতকাল রাত থেকে আমিষ খাবারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন! আমিষ খাবার ছুঁয়ে দেখবেন না! শ্যামলের মা পড়েছেন মহা ফাঁপরে ! শ্বশুরের কথা মত আমিষ রান্না করলেই খুব অশান্তি! নিজে খাবেন না আর কাউকে খেতেও দেবেন না! উভয় সংকট!! ব্যাপারটা এমন কিছুই হত না! কিন্তু গন্ডগোল পাকল খবরের চ্যানেলগুলো! মাছ তাজা রাখতে এবং দীর্ঘক্ষণ তাজা দেখানোর জন্যে ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে!
বাপিটা একটা গাধা! মুখ খুললেন তিনি! এত বয়স হলো, কোথায় শরীর ভালো রাখার জন্যে নিরামিষ খাবে! তা নয়! দুবেলা মাছ, মাংস না হলে ডিম! আজ থেকে সব বন্ধ, বলে রাখলাম! বাপিটা কে বুঝতে পেরেছেন তো? আমাদের শ্যামলের বাবা!!
বৌমা তোমাকে বলে রাখছি! বাড়িতে আর মাছ আসবে না! কেউ খাবে না! শরীর খারাপ করলে ডাক্তারের কড়ি কে গুনবে শুনি? শ্যামলের মা প্রমাদ গোনেন! এই ৮০ বছরের শ্বশুর মশাই-এর মাথায় যা চাপবে তাই করে ছাড়েন! বাধা দিলেই লঙ্কাকাণ্ড!
কি রে? হা করে কি শুনছিস? বেরো, বাজারে যা! আমি লিস্ট করে দিচ্ছি, সব দেখে শুনে নিয়ে আসবি!শ্যামলের ঠাকুরদা এক হুঙ্কার ছাড়লেন! এই দ্যাখ লাউ, পাকা কুমড়ো,পটল,ভেন্ডি,ঝিঙ্গে আর অল্প গাজর! ভেন্ডির মাথা ভেঙ্গে দেখে নিবি কচি কিনা! পটল যেন একদম কচি হয়! আর পারলে আলু ২কিলো নিয়ে আসিস! সব দেখে শুনে নিবি! ভুল যেন না হয়! এখন বাজারে খুব মেথি শাক ওঠে! দেখতে পেলে দু আঁটি নিয়ে নিস বাবা! মেখি শাকের চচ্চড়ি আর মেথি শাকের পরোটা উফ! দারুন লাগে রে খেতে!
ক্যাবলার মত এখনো দাঁড়িয়ে আছিস? শ্যামল তার ঠাকুর্দার কথা মত ব্যাগ বগলদাবা করে বাজারে বেরিয়ে গেল মনে মনে গজ গজ করতে করতে! বেচারা শ্যামল, তাকে দোষও দেওয়া যায় না! রোজ মাছ, মাংস- ডিম খেয়ে জিভ অভ্যস্ত । এখন নিরামিষের দিকে ঠেলে দিলে খুবই ঝামেলা! নিরামিষের মধ্যে পনিরটা চলতে পারে! কিন্তু ভেন্ডি, পটল!! ওয়াক থু:!! এদিকে শ্যামলের মা-ও পড়েছেন ঝামেলাতে! একটা রান্না করলে ভাত খাওয়া হয়ে যেত, তা নয় এখন ২-৩ রকমের নিরামিষ রান্না করতে হবে! যতো ঝকমারি! কি দরকার ছিল ওসব জিনিস টিভিতে দেখানোর? এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল নতুন # হ্যাংলা হেঁশেল বাড়িতে দিয়ে গেছে! ওটা তো রান্নার সব মুস্কিল আসনের চাবি কাঠি!
এইবারের হ্যাংলা পুরো নিরামিষ! একদম ঠিক শুনছেন! কিন্তু সব সময় নিরামিষ থাকলে তো হয় না! যাক গে সেসব কথা! মোদ্দা কথা হলো দেখে নেওয়া যাক কী কী থাকছে! আমরা হ্যাংলারা খেতে আর খাওয়াতে খুবই ভালবাসি! কিপ্টেদের কথা আলাদা!
থাকছে আমাদের শেফ দেবাশিস কুন্ডুর পঞ্চ নিরামিষ রান্না! এই পাঁচ পদ বাড়িতে রান্না করলে শ্যামলদের বাড়ির মত অবস্থা হবে না এইটুকু জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে! আর নিরামিষ রান্নার মধ্যে বড়ির চল খুব! শুক্তো থেকে নিরামিষ ঝোল আবার আমিষের মধ্যে মাছ-এর ঝোলেও বড়ি দেওয়া যায়! বড়ির ঝাল গরম ভাত দিয়ে উফফ! জাস্ট জমে যায়! হ্যাংলা ক্লাবের ১২ জনের নিরামিষ রান্না! এঁচড়, লাউ, মোচা, থোড়, বেগুন আর ঝিঙ্গের নানা রকম রান্না! ধোঁকার রেসিপি থেকে সয়াবিনের নতুন রান্না! সঙ্গে থাকছেন দীপান্বিতা ভাটিয়া! পনির দিয়ে পাক–ই-পনির! আর শুক্লা মুখোপাধ্যায়ের হাতের শুক্তো তো থাকছেই!
আরো অনেক কিছু আছে, থাকছে আমাদের নিয়মিত বিভাগ গুলো! সামনে দোল আসছে! সেটা নিয়েও থাকছে স্পেশাল কিছু! না না! সব বলা যাবে না! আর কী জানেন তো নিরামিষের সঙ্গে আচার না হলে ঠিক জমে না! তবে আর কী? টক ঝাল মিষ্টির স্বাদ চাটতে চাটতে লেগে পড়ুন কোমর বেঁধে!
আমরা আছি আর আমাদের সঙ্গে থাকুন আপনারা! নিরামিষ রান্না কিন্তু ইনোভেটিভ ওয়েতে! আসলে নিরামিষ হোক বা আমিষ হ্যাংলা হেঁশেল জিন্দাবাদ!