Editorial : দ্য মাইক্রোওভেন স্টোরি

26 Aug 2024 | Comments 0

হ্যাংলা দপ্তর, আমাদের অফিস গ্রেমাইন্ডে এখন আলোচনা, উত্তেজনা কিংবা আকর্ষণের বিষয়বস্তু এই একটাই, অফিসে সদ্য আমদানি হওয়া ১২ ইঞ্চির ছোট্ট মাইক্রোওভেনটা। এই একটা বিষয় অফিস সংক্রান্ত যাবতীয় আগ্রহটা রীতিমতো বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক দফা। হ্যাংলার দৌলতে আপাতত নামী শেফদের জিভে জল আনা রেসিপির অভাব নেই আমাদের দপ্তরে। সেখানে দু একটা রেসিপি নিয়ে পরীক্ষাপর্ব যে একেবারেই চলছে না, তা আর বলি কী করে। কাজকর্ম ফেলে মাইক্রোওভেনের সামনে বেশি বেশি সময় কাটাচ্ছে হ্যাংলা সম্পাদক নিজেই। অন্যরাও আছে। অফিসের স্বঘোষিত শেফরাও আছে। দারুণ মাংস রান্না করি দাবি করে অফিসের এক ‘ভজহরি মান্না’ সহকর্মী যে চিকেন পদ মাইক্রোওভেন থেকে নামল, তা রীতিমতো টক টক। আমাদের মিস্টার ভজহরিকে তা জানতে সগর্বে দাবি করল, এটা তো চিকেন চাটনি। তাই সই। খিদের চোটে রুটি আর গরম চিকেন চাটনিই অফিসের বাকি ঘণ্টাগুলো যে জমিয়ে দিচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বলতে পারি। আর একটা মাইক্রোওভেনই বদলে দিচ্ছে অনেকটা। মিডিয়া জগতে এমনিতেই ডিউটি আওয়ার্স বলে নির্দিষ্ট কিছু থাকে না (এখন অবশ্য কোনও চাকরিতেই থাকে না।)। ফলে সুবিধা হচ্ছে বেশ। কাজকর্ম সেরে নিজের খাবারটা নিজেই বানিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। কিংবা বাড়ির টিফিনটাও টেবিলে আসছে একেবারে ধোঁয়া ছেড়ে। আরও একটা বাড়তি উপকার আছে। চিত্রপরিচালক অনুরাগ বসু একবার বলেছিলেন সেটা। অনুরাগের অফিসে নিত্যদিন দুপুরের রান্নাটা একটা বড় ইভেন্ট। ফ্রিজে মাছ, মাংস বোঝাই থাকে। যে যখন সুযোগ পায়, রান্না করে নেয়। অনুরাগ নিজে রাঁধতে বেশ পছন্দ করেন। বেশিরভাগ দিন ইউনিটকে নিজে রেঁধে খাওয়ান। অনুরাগের অভিজ্ঞতায়, ‘রান্নাঘর হল আমার স্ট্রেস রিলিফের একটা বড় জায়গা। রান্না করলে মানসিক চাপটা অনেক কমে যায়।’ অনেকটাই ঠিক বলেছেন যে অনুরাগ, মাইক্রোওভেনোত্তর পর্বে সেটা বুঝতে পারলাম। নিজের হাতে রান্না বোধহয় অনেকটাই স্ট্রেস কমিয়ে দেয়। তাই যাঁরা এখনও অফিসের কিচেনে মাইক্রোওভেন ঢোকাননি, তাঁদের কাছে হ্যাংলা সম্পাদকের পরামর্শ, অবিলম্বে ওটা কিনে ফেলুন। অফিস কিনতে রাজি না হলে সহকর্মীরা সবাই মিলেও করতে পারেন। দেখবেন, ভাল, স্বাস্থ্যকর, পরিচ্ছন্ন খাবার আপনাকে সুস্থ রাখছে। বাড়ির খাবার সঙ্গে আনার সুযোগ, ইচ্ছা সবটাই বেড়ে যাচ্ছে। আবার সবাই মিলে রান্নাটা বাড়াচ্ছে সম্পর্কের উষ্ণতা, টিম স্পিরিটটাও। তাই শুধু একটা ছোট্ট মাইক্রোওভেন কিন্তু রীতিমতো চমৎকারি দেখাতেই পারে। তাই আর দেরি কেন!
খাবার কি আদৌ সম্পর্কে উষ্ণতা বাড়াতে পারে? আলবাত পারে। বাড়িতে কিংবা রেস্তোরাঁর একটা ভাল ডিনারের আয়োজন কীভাবে সম্পর্কের সমীকরণ মাঝে মাঝে বদলে দেয়, সেটা নিশ্চয়ই সবার অভিজ্ঞতায় ভরপুর। আর যাঁদের দাম্পত্য, প্রেম, একেবারে রান্নাঘরে কিংবা রেসিপির সন্ধানেই কেটে যায়? ব্যারাকপুর স্টেশনের পাশ দিয়ে এগোলে আপনার চোখে পড়বেই দাদা-বৌদির বিরিয়ানি। ওই তল্লাটে খুব কম লোক আছেন, যাঁরা দাদা-বৌদির বিরিয়ানির স্বাদ নেননি। ওঁদের দাম্পত্যের সবটা রান্নাঘরেই কেটে গেল। হ্যাংলা শুরু হওয়ার পর আমার ছোটবেলার শহরের এক দিদির ফোন মাঝে মাঝে পাই। হ্যাংলার জন্য রেসিপি খোঁজেন, উৎসাহ দেন। দিদি বাড়ি থেকে হোম ফুড সার্ভিস চালান। জামাইবাবু পুরোদস্তুর ক্যাটারিংয়ে। ভাল রান্নার খোঁজেই সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন ওঁরা। এখনও দিদির বাড়িতে হাজির হয়ে যাওয়া মানেই জিভে জল আনা একের পর এক খাবার আর ওঁদের একমুখ হাসি। হাসি, রান্না আর ভরপুর ভালবাসা ছাড়া ওঁদের দাম্পত্যের রেসিপিতে অন্য কিছু দেখিনি আমি, বিশ্বাস করুন। তাই ওই বিশ্বাসটা বোধহয় আরও জোরালো হয়েছে, ভাল খাবার, ভালবেসে তৈরি করা খাবার ভালবাসার ভিতরটা প্রতিদিন একটু একটু করে জোরালো করে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হ্যাংলা শো-কেস

সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের অনলাইন স্টোরে আপনাকে স্বাগতম

1
Latest Magazine