সংবাদমাধ্যমে ২৫ বছর কাটিয়েই ফেললাম। আজকাল পত্রিকায় ক্রীড়া দপ্তরে যখন প্রথমবার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করতে গেলাম, তখন আমেরিকায় ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে। দেখতাম নিউইয়র্ক কিংবা ওয়াশিংটন থেকে পাতার পর পাতা ফ্যাক্স আসছে দপ্তরে। সাংবাদিক দেবাশিস দত্ত আর জি সি দাস গেছিলেন বিশ্বকাপ কভারেজে। তাঁরা পাঠাচ্ছেন বিশ্বকাপের নানা আপডেট। আর টেলেক্সে ২৪ ঘন্টা ধরে আসছে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে খবর। এপি, রয়টার, ইউএনআই, পিটিআই নানা সংবাদসংস্থা পাঠাচ্ছে। সেখান থেকে বাছাই খবর নিয়ে সাব এডিটররা লিখে ফেলছেন তাঁদের প্রতিবেদন। তারপর টেলিভিশন। বাংলার প্রথম বেসরকারি নিউজ বুলেটিন ‘খাসখবর’-এ যখন কাজ করছি, তখন শুরুর দিকে ইউম্যাটিক ফর্ম্যাটে কাজ হত। সেই পুরোনো দিনের ভিডিও ক্যাসেট, অনেকটা ভিএইচএস-এর মতো। তারপর এল বিটা। প্রযুক্তি একধাপ এগোল। তারপর ডিজিটাল, হাই ডেফিনেশন হয়ে এখন টিভিতেই 4K প্রযুক্তিতে কাজ হচ্ছে। ২৫ বছরে চোখের সামনেই দেখলাম কতরকম বদল। মানুষের সংবাদমাধ্যমের নির্ভরতা প্রিন্ট, টিভি ছাপিয়ে এখন ডিজিটাল মিডিয়ায়। হাতের মুঠোয় অ্যান্ড্রয়েড ফোন। সেখানেই এসে যাচ্ছে সবকিছু। নিউজ, এন্টারটেনমেন্ট, ইনফোটেনমেন্ট, স্পোর্টস- সব। খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, টিভি সব থেকে চোখ সরিয়ে নতুন প্রজন্ম আজ শুধুই হাতের মোবাইল ফোনটায়। সোশ্যাল মিডিয়া আছে, নানারকম এন্টারটেনমেন্ট অ্যাপ আছে, পরিষেবার নানা অ্যাপ্লিকেশন নেটদুনিয়া জুড়ে- বিশ্বজোড়া এই ফাঁদের বাইরে আসতেই দেবে না আপনাকে। হ্যাংলা হেঁশেলের এই ডিজিটাল মিডিয়ায় আমাদের বেশ সরব উপস্থিতি। ফেসবুকে আমাদের অনুগামী ১ মিলিয়ানেরও বেশি। আমাদের ওয়েবসাইট hanglamagazine.com-এও ট্রাফিক সংখ্যা বেশ অনেকটাই। সামনের দিনে আমাদের লক্ষ্য, ইউটিউবেও যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া। হ্যাংলা হেঁশেলের ইউটিউব চ্যানেলেও বেশ কয়েক বছর আগেই শুরু করেছিলাম আমরা। ১,৮৯,০০০ সাবস্ক্রাইবারও আছে। তবু বেশ অনিয়মিত ছিলাম আমরা। প্রধান কারণ, স্টুডিওর অভাব। ঠিক যে মানের কুকিং ভিডিও আমরা তৈরি করতে চাইছিলাম নিজস্ব স্টুডিওর অভাবে সেটা সম্ভব ছিল না। তাই অপেক্ষায় ছিলাম। তবে অপেক্ষার বোধহয় এবার অবসান হল। আমাদের স্টুডিও তৈরি। ট্যাংরায় আমাদের অফিসেই হয়েছে স্টুডিও। তৈরি করা হয়েছে কিচেনের একটা সেটও। কুচিনা মডিউলার কিচেনের সৌজন্যে। এখানেই এবার থেকে কুকিং ভিডিও শ্যুট করব আমরা। রান্না করাবেন আপনারা। এতদিন হ্যাংলার পাতায় আপনাদের অসাধারণ প্রতিভা সবার সামনে তুলে ধরেছি আমরা। এবার ইউটিউব আর ফেসবুকের মাধ্যমে সেই প্রতিভা নিয়ে পৌঁছাব আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে। হ্যাংলার পাতায় হ্যাংলা ক্লাবের সদস্যদের নানা রেসিপি দেখে প্রতিদিন মনে হয়, অসাধারণ শিল্পী এঁরা সবাই। নিজের নিজের রান্নাঘরের ম্যাজিশিয়ান ওঁরাই। এবার এই ম্যাজিশিয়ানরা নিজের হাতে রাঁধবেন হ্যাংলার হেঁশেলেও।
ইউটিউব কিংবা ফেসবুকের এই দুনিয়াটা সত্যি অনেকটা বড়। ভাল রান্না, আকর্ষণীয় রেসিপি এমন প্ল্যাটফর্ম দিতে পারে। যা বদলে দিতে পারে গোটা জীবনটাই। কীভাবে? চলুন আপনাদের নিশা মাধুলিকার গল্প শোনাই। ৫৮ বছর বয়েসি এই ইউটিউবার গত সাত-আট বছর ইউটিউবে কুকিং ভিডিও আপলোড করছেন। এই মুহূর্তে ভারতে যেসব ইউটিউবার আছেন, সাবস্ক্রাইবারের বিচারে নিশা রয়েছেন তাঁদের মধ্যে তিন নম্বরে। প্রায় ১৫০০ ভিডিও আছে তাঁর চ্যানেলে। সবগুলো নিরামিষ রান্না। হাতের কাছে যা যা পাওয়া যায়, সেসব দিয়ে রান্নার টিপসই নিশার চ্যানেলের সবচেয়ে বড় ইউএসপি। এই মুহূর্তে তাঁর চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৭২ লাখ পেরিয়ে গেছে। ভাবতে পারেন? নয়ডার এক বাড়ির রান্নাঘর থেকে শুধুমাত্র কুকিং ভিডিও আপলোড করে ৫৮ বছরের এক মহিলা দেখাচ্ছেন, এভাবেও কত বড় স্বীকৃতি পাওয়া যায়। শুধু স্বীকৃতিই নয়, ইউটিউব দুনিয়ায় রীতিমত সুপারস্টার তিনি। ২০০৭ সালে ফুড ব্লগ লেখা দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর পথচলা। ২০১১-এ তৈরি করলেন নিজের এই ইউটিউব চ্যানেল। আর বাকিটা ইতিহাস। কিংবা কবিতা সিং। ইউটিউবে ওঁর চ্যানেল দেখতে পাবেন, কবিতা’স কিচেন নামে। ভারতে টপ টেন ইউটিউবার লিস্টে কবিতাও আছেন তাঁর কুকিং ভিডিও নিয়ে। সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৫১ লাখের বেশি। প্রতিদিন প্রচুর মানুষ দেখছেন কবিতার কুকিং ভিডিওগুলো। হ্যাংলাও ঠিক এইভাবেই আপনাদের রান্না নিয়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে চাইছে। ভাল খাবারের সন্ধান পেলে মানুষ ঠিক খুঁজে নেবে। আর ভাল রান্নার ঠিকানা বলে দেবেন আপনারা, হ্যাংলার গ্রাহকরা। কে বলতে পারে, একটা ভাল রান্না, আপনার কুকিং টিপস হয়ত আপনাকেও পৌঁছে দেবে লাখ লাখ মানুষের কাছে।
আমাদের হ্যাংলা ইউটিউব চ্যানেল আর ফেসবুক পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন। আপনিও যদি এই উদ্যোগে সামিল হতে চান যোগাযোগ করুন আমাদের সঙ্গে। বাজারে কুকিং ভিডিও চ্যানেল তো অনেক, কিন্তু কথা দিতে পারি, হ্যাংলার উদ্যোগ একটু অন্যরকম হবেই।
Editorial: সম্পাদকীয়
Read Time:7 Minute, 38 Second