Editorial : সম্পাদকীয়

23 Dec 2024 | Comments 0

নরিম্যান পয়েন্টের ট্রাইডেন্ট হোটেলের একত্রিশ তলা। একেবারে কোণের বিশাল ঘরটায় জানলার কাচে মুখ রেখে এক চেনা, পরিচিত মুখ। গায়ে ঘন নীল রঙের ব্লেজার। পায়ের নিচে, আরব সাগরের কোল ঘেঁষে ছুটন্ত মেরিন ড্রাইভে আলো জ্বলতে শুরু করেছে। মুম্বইকাররা বলেন, ডায়মন্ড নেকলেস। আমি দেখছিলাম, টুকরো টুকরো আলোর বিজয়মালা। মুম্বইয়ের বুকে, এক বাঙালির জন্য। আরব সাগরের দিকে তখনও অপলকে তাকিয়ে আছেন যিনি। দূরে দেখা যাচ্ছে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। সেখান থেকেই একটু আগে ফিরেছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের রাজ্যপাটের দায়িত্ব নিয়ে। পনেরো বছর বয়সে প্রথম ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে খেলা। কাঁধে কিটস ব্যাগ নিয়ে, দুরুদুরু বুকে কীভাবে প্রথমবার মুম্বইয়ের ক্রিকেট মক্কায় ঢুকেছিলেন, এখনও মনে আছে তাঁর। আর সেই ওয়াংখেড়ের লাগোয়া ভারতীয় ক্রিকেটের হেডকোয়ার্টারেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা হল, বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন। তখন থেকেই ব্লেজারটা গায়ে। এটা পরেই প্রথমবার ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে টস করতে গেছিলেন। ব্লেজারটা তোলা ছিল। সাংবাদিক সম্মেলনেই বললেন, ব্লেজারটা কিন্তু অনেক ঢিলে হয়ে গেছে। খেলা ছেড়েছেন প্রায় এক দশক। খেলোয়াড় জীবনের ব্লেজার ঢিলে হয় কী করে? সহজাত ব্যাকরণ হল, খেলার জীবনের ফেলে আসা পোশাক গায়ে ঢুকবে না। রহস্যটা একটু পরেই বোঝা গেল। সমস্ত পদাধিকারীর জন্য লাঞ্চের ব্যবস্থ্য ছিল বোর্ডের তরফে। খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজন। সৌরভ খেলেন শুধুই স্যালাড আর সামান্য দই। লাঞ্চ বলতে ওইটুকুই। সন্ধেয় এক সর্বভারতীয় চ্যানেলের পদাধিকারীরা দেখা করতে এলেন। হোটেলের ক্লাব লাউঞ্জে মিটিং। সেখানে বসে অর্ডার করলেন, ‘বানানা শেক। উইদাউট সুগার। ‘রাতে ডিনার টেবিলে বসেও বড়জোর একটা কলা। সারাদিনে এই ডায়েট যাঁর, তিনি তো আরও ছিপছিপে হবেনই। শুধু তাই নয়, বোর্ডের মিটিং সেরে ঘন্টাখানেক জিমও সেরে এলেন। সাফল্যের খিদে মানুষের ফিনিশিং পয়েন্টগুলোকে একটু একটু করে এগিয়ে দেয়। ফিট থাকার চেষ্টায় কতরকম কৃচ্ছ্রসাধন। ফিটনেস দুনিয়ায় এখন চালু ফর্মুলা, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং খেলোয়াড় থেকে গ্ল্যামার দুনিয়া সবাই উপোস থাকছেন টানা ১৬ ঘন্টা। তারপর কিছু খাবার। মিষ্টি একেবারে বাদ। তেল কম। ক্রিকেট দুনিয়ায় হালের বিরাট কোহলি থেকে পূর্বসূরি শচীন তেন্ডুলকার, সুনীল গাভাসকার সবাই এখন ইন্টারমিটেন্টের কড়া অনুশাসনে। সৌরভের ডায়েট ফর্মুলা আবার অন্যরকম। কার্বোহাইড্রেটস একেবারে বন্ধ। অর্থাৎ ভাত, রুটি বাদ দিয়ে ফেলেছেন খাবার তালিকা থেকে। বাড়িতে ডিনার টেবিলে দেখা যায়, সৌরভ শুধু ডাল খাচ্ছেন। সঙ্গে বড়জোর একটা তরকারি। আর সেভাবেই দাদাগিরি মঞ্চ কাঁপছে। তৈরি হচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটের সবথেকে বড় দায়িত্বভার সামলানোর জন্য।
কিন্তু হ্যাংলাদের কী হবে? সেরা টোটকা হল, নিশ্চিন্তে খান। আর জিমে গিয়ে ,মাঠে দৌড়ে, রাস্তায় হেঁটে ঝড়িয়ে ফেলুন বাড়তি ক্যালরি।কারণ খাবার দাবারের সঙ্গে ভাল লাগা , ভাল থাকা, আর আবেগের ওঠা পড়া জড়িয়ে থাকে, একেবারে এড়িয়ে থাকবেন কী করে! পুজোর সময় যেমন হল এবার কৃষ্ণাকে দেখে। ব্যান্ডেল বাজারে ঘুগনি বিক্রি করত কৃষ্ণা। আমাদের শৈশব কিংবা কৈশরে যখন রেলওয়ে কোয়াটার্স জীবন, কৃষ্ণা ছিল প্রতিদিনের সঙ্গী। দু’টাকায় শালপাতা ভর্তি ঘুগনি, তাতে মিশে যাচ্ছে মশলা, তেঁতুলের জল আর নিপুনহাতে সেসব মিশিয়ে যেত ও। একটা বড় পিতলের থালায় ঘুগনি বানিয়ে আনত। নিচে একটা স্টোভে জ্বলত আগুন। আর থালর ঠিক মাঝখানটা গর্ত করে ঘুগনি মিক্স হত। দুর্দান্ত সেই ঘুগনি। পুজোর নবমীতে ব্যান্ডেল বাজার দিয়ে যাবার সময় কৃষ্ণাকে চোখে পড়ল। বয়স বেড়েছে অনেকটাই। কিন্তু বাকিটা সব একরকম। সেই পিতলের থালা, সেই একই রকমভাবে সাজানো ঘুগনি, একই স্বর্গীয় স্বাদ। নিপাত যাক ডায়েটের চোখ রাঙানি। মায়ের হাতে এক প্লেট, নিজে এক প্লেট নিয়ে আবার চেপে পড়লাম গাড়িতে। গন্তব্য কলকাতা।
ব্যান্ডেলে রেল কোয়ার্টার জুড়ে এসব স্মৃতির স্বাদ। একসঙ্গে থাকা, খাওয়ার মধ্যে যে সামাজিক অনুভূতি, পারস্পরিক বিশ্বাস আর সৌহাদ্য থাকে, সেটা অতুলনীয়। নিমাইল হ্যাংলা পুজোর সেরা ভোগের পুরস্কার বিতরণের রাতে আবার মনে পড়ল ওই একসঙ্গে বেড়ে ওঠার দিনগুলো। আবাসনের পুজো মানেই অন্যরকম। সবার পুজো। সবার প্রচেষ্টা। সবার সাফল্য। সবার ব্যর্থতা। নিমাইল হ্যাংলা পুজোর সেরা ভোগ অ্যাওয়ার্ডস নাইটেও সেসব দেখলাম। কোন আবাসন এলেন একসঙ্গে বাসে চেপে। কোন আবাসনের মহিলাদের সবার একইরকম শাড়ির বাহার। কেউ আবার এলেন শাঁখ বাজিয়ে। আর সাফল্য মিলতেই শুরু হল ঢাকের তালে তুমুল নাচ।
এবারের নিমাইল হ্যাংলা পুজোর সেরা ভোগ পর্ব শেষ। সামনে শীতকাল। শীত জুড়ে হ্যাংলার অনেক পরিকল্পনা। আর ইউটিউব, ফেসবুকে আমাদের কুকিং ভিডিও ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়। হ্যাংলার পাঠক পাঠিকারাই শিখিয়ে দিচ্ছন নতু নতুন রেসিপি। তাই এই পরিবারে আপনাদের সবাইকে স্বাগত। হ্যাংলার সঙ্গে থাকুন। হ্যাংলামিতে থাকুন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হ্যাংলা শো-কেস

সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের অনলাইন স্টোরে আপনাকে স্বাগতম

1
Latest Magazine