হেঁশেলে FUSION–এর ফোড়ন
দৃশ্য-১
(আধুনিক, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। সদ্য ফার্স্ট ইয়ারে জেভিয়ার্সে জয়েন করেছে পাবলো। ভাল নাম অনির্বাণ হলেও ‘পাবলো’ নামেই ফেমাস মাথায় স্পাইক চুলের বছর ১৯-এর এই ছেলে। কলেজে বেরোবে, তার আগে ডাইনিং টেবলে খেতে বসেই চিল-চীৎকার পাবলোর।)
–‘অনেক হয়েছে মম, আর না। আজ আমি আর এইসব শুক্তো, ঘ্যাঁট খাবোই না। যতসব বোরিং খাবার। একটু পাস্তা, চাওমিনও তো বানাতে পারো।’
–‘বাবু খাওয়া পাত ছেড়ে ওঠে না বাবা। আজ খেয়ে নে, কাল তোকে ঠিক তোর মনের মতো খাবার বানিয়ে দেব। প্রমিস। কী রে, শুনছিস?’
দৃশ্য-২
(ডাইনিং টেবল বাক-বিতন্ডার ঠিক পরের দিনই। প্রেক্ষাপট সেই ডাইনিং টেবল। সময়টাও একই। টেবলে সেই একঘেয়ে ‘বাঙালি’ রান্না দেখবে বলেই হয়ত খানিকটা ব্যাজার মুখে ওই ঘরে ঢুকল পাবলো। কিন্তু একটা খাবার মুখে তুললেই বাংলার পাঁচের মতো মুখটা হাসি-খুশি হয়ে উঠল।)
–‘আরিব্বাস। মম আজ চিজ দিয়ে এটা কী বানিয়েছ? অসাম হয়েছে খেতে।’
–‘খেতে ভাল হয়েছে তো?’
–‘ইয়া মম, জাস্ট লাভড ইট।’
–‘ব্যস তাহলেই হল। কী বানিয়েছি অতসত জেনে তোর কাজ কী বাপু। নে নে, তাড়াতাড়ি খেয়ে ওঠ। কলেজের দেরি হয়ে যাবে এবার।’
পাবলোর মা পাবলোকে বলেনি ওই রান্নাটা আসলে তিনি বেগুন আর চিজ মিলিয়ে মিশিয়ে বানিয়েছিলেন। এমনি বেগুন দিলে পাবলো থোড়াই ওটা মুখে তুলত? আইডিয়াটা পাবলোর মা পেয়েছিলেন #হ্যাংলা হেঁশেল-এর একটা কুকিং ক্লাসে গিয়ে। রসুনকুচি, পেঁয়াজ কুচি আর স্কুপ করে কাটা বেগুন চিজে মিলেমিশে দারুণ একটা ডিশ তৈরি করেছিলেন শেফ জয়ন্ত ব্যানার্জি। সেই বুদ্ধিটাই কাজে লেগে গেল আর কি!
এটাই তো সমস্যা আজকের প্রজন্মের। সবেতেই একটু হটকে কিছু চাই। রোজকার পাতে সেই ‘মেছো-ভেতো বাঙালি’ কনসেপ্টটা ভীষণ বোরিং তাদের কাছে। কিন্তু রোজকার সেই চেনাজানা সবজিগুলো দিয়ে একটা ফিউশন ফুড বানিয়ে দিলে আর কোনও কথা হবে না। খাবার প্লেট নিমেষে খালাস। এখন ফিউশন ফুডের হেব্বি কদর। শেফ থেকে শুরু করে রান্নায় আগ্রহী মহিলারা — বেশিরভাগই চেষ্টায় ব্যস্ত কী করে ভাল ফিউশন ফুড বানানো যায়। আর তাই পয়লা বৈশাখ সংখ্যায় একগাদা ফিউশন খাবার-দাবার নিয়ে হাজির হ্যাংলা হেঁশেল। ‘বাংলা ফুডের ফিউশন’ নিয়ে গোটা বোশেখ মাস জুড়ে হ্যাংলাদের দরবারে হাজির #হ্যাংলা হেঁশেল।
কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়! বাঙালির পাতে ফিউশন খাবার-দাবার সত্যিই কি আধুনিক? মোটেই নয়। বাঙালির পাতে ফিউশন ফুডের আগমন অনেক আগে থেকেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বড্ড ভালবাসতেন বিদেশি খাবার খেতে। তাঁর রোজকার খাবারের তালিকার মধ্যে প্রায়ই থাকত ‘আইরিশ মাটন স্টু’। ঠাকুরবাড়ির হেঁশেলে রান্না হত ‘পেঁয়াজের পায়েস’, ‘আমের রুটি’ বা ‘নারকেলের রুটি’। এমনকি বিদেশি রান্নার স্বাদের জন্য ফরাসি শেফও হাজির ছিল ঠাকুরবাড়ির হেঁশেলে। তাছাড়া আমাদের সকলের প্রিয় যে সন্দেশ! তা তো পর্তুগিজদের বদান্যতাতেই। বাড়িতে নষ্ট হয়ে যাওয়া ছানা দিয়েই তৈরি হত দারুণ স্বাদের সব সন্দেশ। হ্যাঁ, এটা বলা যেতে পারে যে বর্তমানে বাঙালি খাবারে ফিউশন চেহারা দেওয়ার নানা রকমের এক্সপেরিমেন্ট চলছে।
বাঙালির জীবনে পয়লা বৈশাখ মানেই কবজি ডুবিয়ে পোলাও, মাছের কালিয়া, চিংড়ির মালাইকারি, কষা মাংস। তবে এবারের পয়লা বৈশাখ উদযাপন একটু আলাদা হতেই পারে। চিন্তা নেই, আমরা হ্যাংলার দল আছি আপনাদের সঙ্গেই। এপ্রিল মাসের হ্যাংলা খুললেই পেয়ে যাবেন শেফ দেবাশিস কুণ্ডুর পাঁচটা জম্পেশ রেসিপি। একেবারে ‘ইজি টু কুক’। কোনটা তৈরি চা-পাতা দিয়ে, তো কোনও পিঠে চেহারা পেল ফিউশনের।
শেফ দেবাশিস-এর পরেই পালা আমাদের হ্যাংলা ক্লাব-এর। উফফ, ১০ জন ঘরোয়া মহিলা যা সব ফিউশন খাবার বানালেন না, তারিফ না করে পারা যায় না। কেউ বানালেন ‘এঁচড়ের ক্যানোলিনি’, তো কেউ কই মাছ দিয়ে বানালেন থার্মিডর, সঙ্গে আবার গোবিন্দভোগ চালের রিসোতো। এইরকমই অভিনব ১০ টা রেসিপি। বাড়িতে বানিয়ে তারিফ কোড়াতে হলে সংগ্রহ করতেই হবে এ মাসের হ্যাংলা।
শহরের নামকরা হাফ ডজন শেফ বানালেন ২টো করে ফিউশন ডিশ। শুধু কলকাতার থেকেই নয়, দারুণ সব ফিউশন রেসিপি চলে এসেছে ওপার বাংলা থেকেও। রেসিপি এসেছে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, লন্ডন, কোপেনহেগেন, দুবাই থেকেও। কয়েকজন মায়েরাও শেয়ার করলেন অতীতের কিছু ফিউশন খাবারের রন্ধন প্রণালী।
সব মিলিয়ে দারুণ একটা হ্যাংলা ম্যাগাজিন। ও হ্যাঁ, সামনেই তো ভোট। সেই নিয়েই এবারের ‘সুমনের সিজলার’। কোন নেতা কী খান, কোন খাবার কার প্রিয় তা নিয়েই ক’পাতার ‘রাজনীতিকদের রসনা’। সঙ্গে থাকছে নামকরা পুষ্টিবিদ হেনা নাফিজের গরমে ভোটপ্রচারের আগে কিছু হেলদি টিপস। তবে এই টিপসগুলো যারা বাইরে রোদে কাজ করেন তাদের জন্যও একইভাবে প্রযোজ্য।
ওই দেখুন বলতে এক্কেবারে ভুলে গেছি। হ্যাংলা হেঁশেল কিন্তু গতমাস থেকেই প্রিন্টার-অ্যাকটিভ। কিছু পাতায় দেখবেন একটা করে মোবাইলের চিহ্ন দেওয়া। সেইসব পাতাগুলো স্ক্যান করলেই সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যাবে হ্যাংলার ওয়েবসাইট, ফুড ভিডিও, নানা রকমের রেসিপিতে। শুধু তার জন্য আপনাদের ডাউনলোড করতে হবে ‘ANDERSON’ অ্যাপটি।
সবশেষে বলি শুভ নববর্ষ। কবজি ডুবিয়ে চলুক খাওয়া-দাওয়া।