নিরামিষের নানা রকম!
নদীয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র দেবের সভাসদ ছিলেন গোপাল ভাঁড় ! মহারাজের কিপটে বিধবা পিসিকে নিরামিষ রান্নার মধ্যে চিংড়ি মাছ দেখিয়ে প্রচুর উপহার পেয়েছিলেন মহারাজের কাছ থেকে । কিন্তু আমাদের যেটা আলোচনার বিষয় সেটা কিন্তু গোপাল ভাঁড় না! সেটা হল গিয়ে নিরামিষ রান্না ! আমিষ আর নিরামিষ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে, কাকে আমিষ বলা যায় কোনটাকে নিরামিষ বলা যায়! আসলে আমিষ বলতে আমরা যা বুঝি তা হল মাছ, মাংস, ডিম। এই তালিকায় কিন্তু নিত্যদিনের বহুল ব্যবহৃত পেঁয়াজও পরে। এমনকি রসুন, মুসুর ডালকে আমিষ তকমা দেওয়া হয়! কিন্তু পেঁয়াজ-রসুন তো আলু, কপির মত একটা আনাজ! সেটা কি করে আমিষ হয়ে গেল? ভাই কে বোঝাবে আমাদের বাড়ির লোকেদের? তারা তাঁদের পূর্বপুরুষের থেকে শুনে আসছেন, পেঁয়াজ, রসুন হল আমিষ! তো আর কি করা যাবে? তবে নিরামিষ দিয়ে যে ভালো রান্না হয় না সে অপবাদ শত্রুতেও দেবে না ! আরে নিরামিষ রান্নায় কিছু কম আছে নাকি? ভাত, মুগের ডাল, পোস্তর বড়া, ধোঁকার ডালনা! আরও কত কি! এইসব রান্না করতে সময় একটু লাগলেও খেতে হয় লা জবাব!
ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার সমস্ত খাবারই নিরামিষে করা যায়! সকালে দক্ষিণ ভারতীয় রান্না উপমা আর তার সঙ্গে যেকোনও ফলের রস! দুপুরে ভাত, ডাল, নিরামিষ পাঁচ মেশালি তরকারি আর টকদই, রাতে রুটি আর নিরামিষ সবজি, সঙ্গে কাস্টার্ড । শরীর ভাল রাখতে নিরামিষ খাবারের জুড়ি মেলা ভার । আর শুধু যে বাঙালি খাবারের মধ্যেই নিরামিষকে আটকে রাখতে হবে সে রকম কথা কেউ বলেনি! নর্থ ইন্ডিয়া থেকে সাউথ ইন্ডিয়া আর নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার প্রায় সমস্ত রকম খাবার শুধু নিরামিষ । আচ্ছা একটা কথা কি জানা আছে? ভারতের একটা প্রদেশে বিচুটি পাতা দিয়েও নিরামিষ রান্না করা হয়!! একদম সত্যি! আর শুধু তাই নয়, পচা আলু দিয়েও নিরামিষ রান্না খুব জনপ্রিয় ডিশ! শুনে মাথা ঘুরছে? না না ঘাবড়ানোর কিছু হয়নি! এ তো সবে নিরামিষ খাবারের যাত্রা শুরু! রাস্তাতে যেতে যেতে আরও খাবার চোখে পড়বে! আর্ন্তজাতিক নিরামিষ ডিশও চোখে পড়ার মত! আমাদের লোকাল বাজারে এখন লাল হলুদ ক্যাপসিকাম খুব চোখে পড়ছে তার সঙ্গে ব্রকলিও দেখা যায়! এইসব যেমন স্বাস্থ্যকর তেমন সুস্বাদু ! বেশি তেল মশলা না দিয়ে হালকা করে রান্না করলে দারুন জমে যায় আমাদের ভারতীয় রুটি বা ভাতের সঙ্গে! যারা মাছ মাংস ডিম খান না তাঁরা যদি সপ্তাহে ৫ দিন মাশরুম আর সোয়াবিন দিয়ে রান্না করা যেকোনও পদ খান তবে সমান প্রোটিন পাবেন! আর পাস্তা থেকে নুডলস বিকেলের ‘ছোট খিদে’ মেটাতে এর জুড়ি নেই!
চিজ দিয়েও বিভিন্ন রকম নিরামিষ খাবার তৈরি করা যেতে পারে! আর চিজ তো প্রায় সবারই প্রিয়! চিজ পিৎজা মানে যেটা ‘মার্গারিটা’ নামে পরিচিত সে তো চরম উপাদেয় বস্তু! এখন পনিরের বদলে টফুর চল হয়েছে! সে পনিরের জাত ভাই! জাতে ইউরোপীয় ! ভারতীয়রা চিরকাল পরকে আপন করে এসেছে! আর বাঙালিদের খাবারের ব্যাপারে কোনো ছুঁতমার্গ নেই সেটা প্রমাণিত ।
#হ্যাংলা হেঁশেল সেই রসনার উত্তরসূরী হয়ে বহন করছে সেই মহান কালচারাল কমিউনিটিকে! যারা খেতে ভালোবাসেন, খাওয়াতে ভালবাসেন …
নিরামিষ রান্না সেই প্রাচীন কাল থেকে আজও সমান ভাবেই জনপ্রিয় তাই তো আমাদের ব্লগে আপনারা জানাতে ভুলবেন না আপনাদের কথা ! সে নিরামিষ থেকে আমিষ!
#হ্যাংলা হেঁশেল আপনাদের জন্যেই …………..