Editorial : সম্পাদকীয়

15 Dec 2024 | Comments 0

স্কাইলাইনটাই বদলে গেছে এই কলকাতার। এই তো বছর দশেক আগেরও কথা নয়, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসটা তখনও কত ফাঁকা। আর এখন? তিলধারণের জায়গা পাবেন না। নতুন হোটেল, রেস্তোরাঁ, ঝাঁ চকচকে আবাসন। কত কী। খুব অবাক হয়ে যাই বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে রুবি হাসপাতাল-অবধি রাস্তাটা দেখে। শপিং মল, স্টেডিয়াম, হোটেল- কী নেই। সিমেন্সের মোড়ে বিরাট রাজডাঙ্গা মাঠ যেটা অক্সিজেন জোগাত, সেটাও কোন এক ময়দানবের হাতে পড়ে হয়ে গেছে বিরাট স্টেডিয়াম। প্রচুর নতুন বাড়ি, হাউসিং কমপ্লেক্স। কয়েক বছরে যেন কসবা রাজডাঙ্গা বদলে গেল। চেনা পাড়া বদলে গেলে কি সম্পর্কও বদলে যায়? চেনা ধারণাটা সেদিন ধাক্কা খেল রাজডাঙ্গার পিঠেপুলি উৎসবে গিয়ে। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামের ঠিক উল্টোদিকে পিঠেপুলির উৎসব। অন্তত গোটা পঞ্চাশেক স্টল সাজিয়ে এলাকার মহিলারা। এক একটা আবাসন, এক একটা ক্লাব সংগঠন থেকে এক একটা স্টল। আর তাতে পাওয়া যাচ্ছে দুধ পুলি, পাটিসাপটা, সেদ্ধ পিঠে, রসবড়া, গোকুল পিঠে থেকে একেবারে মাংসের পিঠে। বাড়ি থেকে পিঠেপুলি বানিয়ে এনে মেলা জমিয়ে দিয়েছেন রাজডাঙ্গার মহিলারা। সব বয়েসের সবাই আছেন। এই অঞ্চলের পুরনো অধিবাসীরা আছেন, আছেন সদ্য ফ্ল্যাট কিনে আসা নবাগতরাও। আর পিঠেপুলি মিলিয়ে দিয়েছে ওদের সবাইকে। তাই যতই রাজডাঙ্গার আকাশ বদলাক, অন্তরাত্মাটা বোধহয় একই রকম। আর এটুকু ধরে রাখার জন্য মেলার আয়োজক রাজডাঙ্গা ক্লাব সমন্বয় সমিতির বোধহয় একটা বড় ধন্যবাদ প্রাপ্য।
অথচ এই সময়ের সবচেয়ে সঙ্কট কিন্তু ওটাই। একে অপরকে কতটা চিনি আমরা? চেনার মাধ্যমটা নেহাতই ভার্চুয়াল হয়ে গেছে। তাহলে রইল কী? পাশের বাড়ির মানুষটাই তো আর বন্ধু নন। একজনের খবর অন্য জন রাখেন না। অচেনা, অজানা, বন্ধুত্বহীনতার এই রাস্তাগুলো দিয়েই ঢুকে পড়ছে এলাকায় এলাকায় নানা সামাজিক ব্যাধি। আমরা সব জানি। কিন্তু কীভাবে এগিয়ে আসতে হবে, কীভাবে একে অপরের বন্ধু হতে হবে তা জানি না। রাজডাঙ্গার মানুষরা কিন্তু দেখিয়ে দিলেন, বন্ধুত্বের বড় ক্যাটালিস্ট হতেই পারে, সুখাদ্য। কলকাতার বুকে দমদম থেকে যোধপুর পার্ক- এখন এরকম অনেক খাদ্যমেলা। কোথাও রাজ্যের মন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন, কোথাও আবার কর্পোরেট কিংবা মিডিয়া হাউস। ভাল খাবার যে আত্মীয়তার বন্ধন গড়ে দিতে পারে, বিশ্বাস করছেন ওঁরা সবাই।
আনন্দের বিষয় হল যে সরকারও একইভাবে ভাবছেন। বহড়ুতে সম্প্রতি হয়ে গেল, মোয়ার মেলা। জয়নগরের মোয়া আর নতুন গুড়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহডুর একটা বড় অবদান আছে, আমরা সবাই জানি। ওই এলাকার বহু মানুষ জড়িয়ে আছেন এই মোয়া প্রস্তুত শিল্পের সঙ্গে। এবার এই অসংগঠিত শিল্পকেই মেলার মাধ্যমে গোটা দুনিয়ার সামনে হাজির করার ভাবনা। বহড়ুতে মেলার দুদিন বহু মানুষ হাজির হয়েছিলেন। কোনও সন্দেহ নেই, এরকম মেলার ভাবনা জয়নগরের মোয়াকে ক্রমশই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড করার দিকে অনেকটা এগিয়ে দেবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হ্যাংলা শো-কেস

সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের অনলাইন স্টোরে আপনাকে স্বাগতম

1
Latest Magazine