Editorial: সম্পাদকীয়

8 Dec 2024 | Comments 0

ম্যাচ জিতিয়ে, বকদীঘি ড্রেসিংরুম থেকে ন’শো গ্রাম পাউরুটি আর আলুর দমের শেষ আটটা আলু শেষ করে কলকাতার দিকে রওনা হলেন আটঘরার স্টার ব্যাটসম্যান সত্যশেখর। সঙ্গে কলাবতী। ইনিংসে ষোলোটা ছয় আর তিনটে চার মেরেছেন সত্যশেখর। আলুর দম আর ওভার বাউন্ডারির মধ্যে কোনও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে কিনা, সেটা আর লিখে যাননি মতি নন্দী। তবে যেটুকু লিখে গেছেন বকদীঘি আর আটঘরার সেই কাল্পনিক মিলেনিয়াম ম্যাচ নিয়ে, বাঙালি পাঠকের কাছে তা চিরকালীন হয়ে গেছে। বকদীঘি ড্রেসিংরুমে সেদিন পাউরুটি, আলুর দম ছাড়া ছিল কমলালেবু আর মিষ্টি দই। পড়তে পড়তে কেমন সটান টাইম মেশিনে ঢুকে পড়তে হচ্ছে, তাই না? শীত পড়তে না পড়তেই পাড়ায় পাড়ায়, ক্লাবে ক্লাবে ক্রিকেট ম্যাচ। যাদের হোম ম্যাচ, লাঞ্চের দায়িত্ব তাদের। পাউরুটি, আলুর দমেই পাসমার্ক। কমলালেবু কিংবা ভেজিটেবল স্টু হলে তো আয়োজকদের লেটারপ্রাপ্তি। কলকাতায় টেস্ট ম্যাচ হলে খবর কাগজে ছোট করে দু’দলের লাঞ্চের মেনু ছাপা হত। এখনও হয়। তালিকায় যা যা থাকত, সে-সব খাওয়াদাওয়া সেরে ক্রিকেটাররা আবার কী করে মাঠে নামতেন, তা রহস্যই থেকে যাবে চিরকাল।
কলকাতায় কয়েকদিন আগে আলাপ হল ডঃ বরুণ চক্রবর্তীর সঙ্গে। বিভিন্ন ফুড ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ছিলেন বরুণবাবু। অধ্যাপনা করতেন। ভারতের প্রচুর শেফ তাঁর হাতে তৈরি। ফুড নিয়ে তাঁর গবেষণাও বিস্তর। দিল্লির কয়েকটি সংস্থা থেকে সে-সব প্রকাশিত হয়েছে বই হয়ে। তিনি বলছিলেন, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রতিটি ক্লাবের এক একদিন এক একরকম মেনু থাকে। ডায়েটিস্ট, নিউট্রিশনিস্ট, শেফরা মিলে তৈরি করেন সে-সব মেনু। এ নিয়ে বিস্তৃত একটি গবেষণার কাজ করে রেখেছেন ডঃ চক্রবর্তী নিজে। ভারতে ক্রিকেট সেন্টার গুলোয় ক্রিকেট ফুড নিয়ে এরকম কোনও কাজ আছে কিনা জানা হয়নি। তবে এটা ঠিক যে আমাদের দেশে, এমনকী বিদেশেও ক্রিকেট স্টেডিয়াম গুলোয় আলাদা আলাদা ফুড কালচার আছে। ইডেনের কথাই ভাবুন। ক্লাবহাউস মানেই হাতে হাতে বিজলী গ্রিলের ফিশ ফ্রাই। অন্য গ্যালারিতে যাঁরা, তাঁদের হাতে টিফিন বক্স।
বাড়ি থেকে এসেছে লুচি আর পাঁঠার শুকনো মাংস। দুপুরে কমলালেবু আর কেক; কলকাতায় ক্রিকেট মানেই সুস্বাদের এই সব দিন মনে পড়ে? এখনকার ইডেনে তো বাড়ির খাবারের প্রবেশাধিকার নিষেধ।
সেই ইডেনটা না হয় নস্টালজিয়াতেই থাক। কলকাতার কত কিছুই তো বদলে গেল। সময়ের নিয়মও তো ওটাই, বদলে যাওয়া। কিন্তু পার্ক স্ট্রিটটাও কি বদলে গেল? মিউজিক ওয়ার্ল্ডের ঠিক উল্টোদিকে এখন যেখানে ম্যাকডোনাল্ডস, ওখানে ছিল ব্লু ফক্স। এই তো কয়েক বছর আগেও। তিন দশক আগে ওখানেই নিজের নামে ব্যান্ড চালাতেন লুই ব্যাঙ্কস। লুই ব্যাঙ্কস ব্রাদারহুড। বন্ধ হয়ে গেছে স্কাইরুমও। শোনা যায়, স্কাইরুমের প্রন ককটেল নাকি উড়িয়ে নিয়ে যেতে হত দিল্লিতে, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জন্য। কলকাতার আরও দুই গর্বের স্মারক পেলিতি, ফারপোজও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকদিনই।
তবু পার্ক স্ট্রিট আছে পার্ক স্ট্রিটেই। ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি-র মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডদের সংযোজন হয়েছে পার্ক স্ট্রিটের দু’ধারে। বারবিকিউ, পিটার ক্যাটে এখনও উপচে পড়া ভিড়। আরও সুন্দরী হয়েছে ফ্লুরিজ। ট্রিঙ্কাস, ব্লু ফক্স, মোকাম্বো, মুলা রুজ থেকে পপ, জ্যাজ, ওয়েস্টার্নের দুনিয়া সরে গেছে সাম প্লেস এলসে। তার ফ্লোরেই কলকাতা নাচছে সালসা, ট্যাঙ্গো, এমনকী পোল ডান্সও। তাই পুরনো যেমন হারিয়েছি, নতুনও পেয়েছি অনেক। এখনও এই সময়টায় পার্ক স্ট্রিট মানে বাড়তি কিছু।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হ্যাংলা শো-কেস

সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের অনলাইন স্টোরে আপনাকে স্বাগতম

1
Latest Magazine