Editorial : বর্তমান জনজীবন ও খাদ্যাভ্যাস
কাজের সুত্রেই সপ্তাহখানেক আগে দিল্লি যেতে হয়েছিল। সন্ধেবেলা কাজকর্ম মিটিয়ে যেতে হল ডিএলএফ প্রোমেনেড মল-এ। যাঁরা এই মল ঘুরে গেছেন, তাঁরা জানেন কীভাবে পৃথিবী বিখ্যাত শপিং ব্র্যান্ডদের একসঙ্গে পাওয়া যায় এখানে। কিন্তু অবাক হয়ে গেলাম প্রোমেনেড মলে সদ্য খোলা ফুডহল দেখে। ফুডহল এর আগে মুম্বই, বেঙ্গালুরুতে খুলেছে। শুনলাম, ওদের তুলনায় দিল্লির ফুডহল পরিসরেও ছোট। কিন্তু ভিতরে ঢুকে চমকে যেতে হল। এককথায়, গোটা পৃথিবীর খাবার রয়েছে পাঁচ হাজার স্কোয়্যার ফুটের ওই একটা হলে। কী নেই? ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জন্য আলু? নিয়ে যান ব্রিগ গ্রিলার পটেটো। এই আলুতে স্টার্চ বেশি, জলীয় ভাগ কম। চিজের সঙ্গে আলু খেতে চান? নিয়ে যান আগাটা। পাবেন রোসভ্যাল ফ্রান্সলাইন। এই আলু স্যালাডের কাজে লাগবে। কিংবা রাট্টে। এই আলু নাকি অসাধারণ স্বাদের হয়। আলুরই এতরকম। বাকিটা সহজ অনুমেয়। মাশরুম র্যাকেই যেমন অনেক কিছুর মধ্যে থাইল্যান্ডের এরিভি মাশরুম পেয়ে গেলাম এখানে। কলকাতায় দেখেছি বলে মনে পড়ল না। ফ্রুটস স্টোরও অসাধারণ। থাইল্যান্ডের শুকনো পেঁপে থেকে ড্রাই লেমন পিল- সব পাবেন। থাই লোঙ্গান, রামবুটানও দেখতে পেলাম এখানে। রামবুটান রোঁয়াওয়ালা লিচুর মতো দেখতে। ওরকমই খেতে। আমাদের কাছে সবটাই নেহাতই অচেনা। নিউমার্কেট কিংবা বাছাই করা কয়েকটা ফলের দোকানে মিললেও মিলতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত থাকুন জাপানিজ তরমুজ কিংবা থাইল্যান্ডের লাল পেয়ারা পাবেন না অন্য কোথাও। মেড ইন বারুইপুরের মতো ভিতরটা নয়, পেয়ারাটা দেখতে আপেলের মতো লাল। এখানে ছোট ছোট হাওয়াইয়ান আনারসেরও খোঁজ পাওয়া গেল। সাইজে বড়জোর একটা নাশপাতির মতো। শুনলাম, প্রচণ্ড মিষ্টি। গোটা শপটাই এরকম নানা খাদ্য বিস্ময়ে সাজানো। বেকারি, ফ্রোজেন ফুড, আইসক্রিম, বিভিন্ন নানা খাদ্য বিস্ময়ে সাজানো। বেকারি, ফ্রোজেন ফুড, আইসক্রিম, বিভিন্ন রকমের চা আর চাল, ড্রাই ফুড, স্ন্যাকস- কী চাই আপনার? সবটাই বিশ্বের সেরা ফুড ব্র্যান্ডগুলোর প্রোডাক্ট। সব মিলিয়ে অসাধারণ আয়োজন ফিউচার গ্রুপের। বসন্তকুঞ্জের এই ফুডহল ওদের তিন নম্বর শপ। এরপর ফুডহল যাবে গুরগাঁও, পুনে। কলকাতার কপালে এই শিকে আদৌ কোনওদিন ছিঁড়বে কিনা বলা কঠিন। কিন্তু ফুডহলের ভবিষ্যৎ যে ভারতীয় রিটেল মার্কেটে বেশ উজ্জ্বল, তা সহজেই বলা যায়।
আসলে ভারতের মাটিতে ফুড অ্যান্ড গ্রসারির রিটেল মার্কেটের বাণিজ্যিক গ্রাফ প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ছে। বর্তমানে এই মার্কেট ১৭ লক্ষ ১২ হাজার কোটি টাকার। ২০১৫-র মধ্যেই যা ২৭ লক্ষ ৪১ হাজার কোটি টাকা হবে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদেশি খাবার আমদানিও। বিদেশি খাবারের স্বাদ পাওয়া ভারতীয়রা প্রাতরাশ থেকে নৈশভোজ অবধি আপাতত বিদেশি খাবারে রপ্ত করে ফেলেছে নিজেদের। বলা হচ্ছে, ড্রাই ফ্রুটস, নাটস, ফ্রেশ ফ্রুটস, ফ্রুট জুস, অ্যালকোহলিক ড্রিঙ্কস সবেতে ভারতীয় মধ্যবিত্তের আগ্রহ বেড়েছে। আকর্ষণীয় হল, সবচেয়ে বেশি কদর বেড়েছে নাকি আমন্ডসের।
সম্প্রতি এক সমীক্ষা বলেছে, ভারতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ব্রেকফাস্টের ধরনটাও বদলে ফেলছে। ভারতীয়দের ব্যস্ত জীবনে সবচেয়ে জনপ্রিয় জলখাবার হতে চলেছে, ব্রেকফাস্ট সেরিয়্যালস। বাড়ছে বিভিন্ন রকম চা-এর চাহিদাও। আর ব্রেকফাস্টই হয়ে উঠেছে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আহার।
এসব বদলগুলো বোধহয় অবশ্যম্ভাবী ছিল। শহরের আগ্রাসন, শহরে মানুষের ব্যস্ততা, আয়বৃদ্ধি, স্বপ্নপূরণ, স্বাস্থ্যসচেতনতা সব মিলিয়ে বদলে দিচ্ছে খাবার সম্পর্কে সব ধারণাই। বলা হচ্ছে, টাটকা ফলই নাকি এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ন্যাকস। এন পি হি বলে একটা সংস্থা আমেরিকায় এ নিয়ে সমীক্ষা করেছিল। দেখা যাচ্ছে একজন গড়পড়তা আমেরিকান এক বছরে যতখানি চকোলেট খেয়েছেন, তার চেয়ে দশগুণ বেশি ফল খেয়েছেন। পটেটো চিপস যা খেয়েছেন, তার চেয়ে বেশি খেয়েছেন ফ্রেশ ফ্রুটস।
তবে সেদিন চমকে গেলাম মুম্বই থেকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বি বি এম পেয়ে। বুম্বাদা ওখানে বোধহয় শুটিংয়ে ব্যস্ত। তার মাঝেই মেসেজ কারেছেন, ‘তোর হ্যাংলার এখানে খুব প্রশংসা শুনলাম। মুম্বইয়েও খুব হিট।’ ওই যে বললাম, এগুলোই আত্মবিশ্বাসটা অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। তারপর আপনারা তো আছেনই।