Story of Food Street : স্টোরি অফ ফুড স্ট্রিট
লাহোরের ফুড স্ট্রিটের টকাটক শব্দটা এখনও কানে লেগে আছে৷ ওখানে একটা কাবাব পাওয়া যায় টকাটক কাবাব৷ তৈরির সময় ওরকম শব্দ করেই গোটা গোয়ালমান্ডি জমিয়ে দেন ফুড স্ট্রিটের কুকরা৷ লোহার বিরাট তাওয়ার ওপর লোহার খুন্তি দিয়ে টকাটক শব্দ করে তৈরি হয় কাবাব৷ স্বাদ? থাক, আবার লাহোর চলে যেতে ইচ্ছে করছে! অদ্ভুত এক দুনিয়া লাহোরের ফুড স্ট্রিটটা৷ দিনের বেলায় শুনশান রাস্তা, গাড়ি চলাচল করে৷ সন্ধে নামতেই ট্রাফিক বন্ধ৷ দু’পাশের বন্ধ দোকানগুলোর ঝাঁপ উঠতে আরম্ভ করে৷ রাস্তায় বিছিয়ে দেওয়া হয় চেয়ার, চৌকি, টেবিল৷ আর রাত নামতেই সে-সবের দখল নিয়ে নেয় দুনিয়ার মানুষ৷ ফুড স্ট্রিটের তখন এক অন্য চেহারা৷ রাতভর মানুষ আসতেই থাকে, খেতেও থাকে অবিরাম৷ দোকানগুলোয় তন্দুর ঘিরে মানুষের ব্যস্ততা৷ ডাল, রোটি, গোস্তের হাজারো প্রিপারেশন৷ আর সেই রসনার সন্ধানেই মানুষ আর মানুষ৷ ফুড স্ট্রিটে ঢোকার মুখেই এক পানওয়ালা বসেন৷ রীতিমতো নবাবের মেকআপে৷ আর সেভাবেই সেজে চলেছেন পান৷ রাতের খাবারের পর্ব মিটিয়ে পান চিবিয়ে মানুষ চলে যাচ্ছে বাড়ির দিকে৷ আলোয় সাজানো ফুড স্ট্রিট তখনও ঝলমল করছে৷ প্রায় ভোররাত অবধি৷
ফুড স্টিট্রের কথায় আবার মনে পড়ল দিন কয়েক আগে ট্যাংরা চীনা পাড়ায় গিয়ে৷ মুম্বই থেকে আসা এক বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছিলাম চীনা পাড়ায়৷ তার দাবি ছিল, চায়না টাউনেই চাইনিজ খাবে৷ মহল্লায় ঢুকে বন্ধু অবাক৷ দু’পাশে শুধুই রেস্তোরাঁ৷ অপরিচ্ছন্ন, অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট৷ অথচ, একের পর এক রেস্তোরাঁ৷ চাইনিজ খানাখাজানার দুর্মূল্য গুপ্তধন নিয়ে অপেক্ষায় যেন প্রত্যেকে৷ আমার বন্ধু তখন মিনি চায়নায় ঢুকে রীতিমতো, উত্তেজিত৷ চাইনিজ রেস্তোরাঁ, চাইনিজ ভাষা, চাইনিজ মানুষ, চাইনিজ স্কুল কলকাতায় আছেন, না ৫০ বছর আগের সাংহাইয়ে আছেন, সত্যি বোঝার উপায় নেই৷ ওখানেই বারবার মনে হচ্ছিল কলকাতার বুকে এটাও তো ফুড মহল্লা, ফুড স্ট্রিট ঐতিহ্য, বৈচিত্র্য, ফুড, রেসিপি সব মিলিয়ে কলকাতার চায়না টাউনও তো কোথাও পিছিয়ে নেই লাহোর গোয়ালমান্ডির ফুড স্ট্রিটের সঙ্গে৷ তা হলে কোথায় পিছিয়ে আমরা? ওটা মানসিকতায়৷ কলকাতা নিয়ে এরকমভাবে কেউ ভাবেইনি কোনওদিন৷ ফুড স্ট্রিট তাই অনেক দূরের স্বপ্ন৷ বরং, আমাদের চায়না টাউন ক্রমশ গুটিয়ে যাচ্ছে৷ জীবিকার টানে এই অঞ্চলের মানুষজন আবার দেশান্তরী হচ্ছেন৷ কেউ পাড়ি দিচ্ছেন আমেরিকা, কেউ তাইওয়ান, কেউ বা অস্ট্রেলিয়া৷ হয়ত এভাবেই কলকাতার চাইনিজ ফুড পাড়াটাও একদিন লুপ্ত হয়ে যাবে৷ অথচ, যিনিই শোনেন এই অঞ্চলের কথা, কলকাতার বুকের এক টুকরো চীনের কথা, তিনিই একবার ঘুরে দেখার, এখানকার খাবার চেখে দেখার ইচ্ছেটা জানিয়ে যান৷ সৌরভ গাঙ্গুলির টিভি শো-এ হাজির গৌতম গম্ভীর৷ আড্ডার মাঝে জানালেন, কে কে আর-এর হয়ে প্রথমবার খেলার সময়ই চায়না টাউনের কথা ৷ একবার ডিনার সারতে চান ওখানেই৷ নিশ্চিত থাকুন, দ্বিতীয় বছর খেলার পরও কলকাতা নাইট রাইডার্স ক্যাপ্টেনের চীনা পাড়ায় খাওয়া হয়নি৷ জঘন্য রাস্তা, আলো-আধাঁরিতে ডুবে থাকা চীনা পাড়ায় গিয়ে কেই বা আর নিরাপত্তার ঝুঁকি নেবেন৷ সৌরভ অবশ্য গিয়েছিলেন লাহোরের ফুড স্ট্রিটে৷ ২০০৪-এর পাকিস্তান সফরে তিনিই ক্যাপ্টেন৷ নিরাপত্তার ওই প্রবল কড়াকড়ি৷ তারই মাঝে কলকাতা থেকে আসা কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে চলে গেলেন ফুড স্ট্রিটে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা সেরে মাঝরাতে ফিরলেন৷ থিক থিক করছে মানুষ চারিদিকে৷ লাহোরে খেলা দেখতে আসা একদল ভারতীয় সমর্থকের চোখে পড়ে যান৷ জিজ্ঞেস করাতে শুধু বলেন, ‘না আমি সৌরভ নই, আমাকে সৌরভের মতো দেখতে৷’ কে জানে, কলকাতায় কবে আসবে সেরকম দিন৷ চায়না টাউনের রাস্তায় বসে তান-মিন সুপে চুমুক দেবেন গৌতম গম্ভীর৷ নির্ভাবনায়, নির্ভয়ে৷
বাঙালির সাহিত্য, সংস্কৃতি, জীবনধারণ কোনওটার সঙ্গে মাছ জড়িয়ে নেই৷ বাঙালির কত রোমান্টিকতা মাছ নিয়ে৷ জীবনের নানা মুহূর্তে কতরকম ভাবে, কত বিচিত্র রকম মাছ খাওয়া যায় সেটা নিয়েই গবেষনা হতে পারে৷ গোয়ার সমুদ্রের ধারে বালির ওপর বসবেন৷ ওঁরা আপনাকে দেখিয়ে নিয়ে যাবে টাটকা টুনা কিংবা কিং ফিশ৷ তারপর আপনার পছন্দের রেসিপিতে হবে মাছের রন্ধন প্রণালী৷ আপনি সুন্দরবনের স্টিমারের ছাদে বসবেন৷ জ্যান্ত মাছ নদী থেকে ধরে আপনাকে ভাজা খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকবে৷ নিস্তব্ধতার ওই জমাট গ্রহে শুধু শুনতে পাবেন আপনার জিভ, দাঁত আর ভাজা মাছের অনবদ্য সিম্ফনিতে কচরমচর শব্দ৷ বাঙালির মাছ রোমান্টিকতার এ-সব হল টুকরো টুকরো জলছবি৷ তেমনই মাছ ফ্যান্টাসি কিংবা মেছো গুলও আছে৷ আশির দশকে বাংলার এক জাঁদরেল নেতা চীন ঘুরে এসে গল্প করেছিলেন, রান্না হয়ে যাওয়া মাছ প্লেটে এসেও নড়াচড়া করছিল৷ চীন মহিমায় সেসময় লালবঙ্গে এ গল্পে লালা ঝরেছিল প্রচুর৷ কেউ বলেছিলেন, স্রেফ গুল৷ বাঙালি অবশ্য এখন আর এ-সব ধাঁধা, সংশয়ে ঘেঁটে যায় না৷ কলকাতায় বসে বাঙালির পাতেও যে এখন চাইনিজ, মেক্সিকান কিংবা ইতালিয়ান ফিশ৷ ভাপা ইলিশ, চিতল মুইঠ্যা থেকে স্টাফড ভেটকি কিংবা বেকড ফিশ পারমেগান- সবটা একসঙ্গে একইরকম ভাবে খাচ্ছে বাঙালি৷ বেঁচে থাকুক এই মাছেভাতে বাঙালি৷ তবে মৎস্যপ্রেম কি শুধু আমাদেরই! হ্যাংলার উদ্বোধনে খোঁজ পাওয়া গেল এক ব্রাজিলিয়ান মছলিবাবার৷ হোসে র্যামিরেজ ব্যারেটো৷ বাংলার ফুটবলের সঙ্গে বাংলার মাছও যে তাঁর এত প্রিয় হয়ে গিয়েছে, জানা ছিল না৷ উদ্বোধনের সব খবর তো আপনাদের জানা৷ সৌরভ আমাদের বলেছেন, হ্যাংলার পাতায় এমন সব খাবার চাই যাতে খাওয়াও চলবে, কিন্তু পেটের সাইজ বাড়বে না৷ খাওয়া চলবে, ফিট থাকাও চলবে৷ ভাবা যায়৷