মায়ের হাতের ম্যাজিক
ইমিগ্রেশনের পালা শেষ। বোর্ডিং পাসটা হাতে নিয়ে এয়ারপোর্ট লবির একটা কোনায় বসে রুদ্র। চোখের কোণটা ভিজে। ফোনের ফেভারিট লিস্টে গিয়ে মায়ের নম্বরটা চেপে ডায়াল করল। ‘বাবু, সব সাবধানে হয়ে গেছে তো? অসুবিধে হয়নি তো কিছু? শোন তোর ল্যাপটপ ব্যাগের ওপরের চেইনটায় টিফিনবক্সে কিছু খাবার দিয়ে দিয়েছি। মনে করে খাস। প্লেনে তো সেই ১৩-১৪ ঘণ্টার জার্নি। খেয়ে নিস, ভুলে যাস না যেন। কি রে বাবু শুনছিস? হ্যালো’।
একটা ঢোক গিলে রুদ্র জবাব দিল,’খেয়ে নেব। তুমি সাবধানে থেকো মা। বাবাকেও দেখে রেখো। পৌঁছে ফোন করব। রাখি’।
এত তাড়াতাড়ি ফোনটা রুদ্র রাখতে চায়নি কিন্তু রাখতে হল। আর পারছিল না। গলাটা কেমন ধরে এসেছিল। আর একটু কথা বললেই কেঁদে ফেলত সে। আজ 4 বছর সে কলকাতা ছেড়ে। কলকাতা কী বলছি, রুদ্র এখন দেশ ছেড়ে সেই বিলেতে থাকে। এবার প্রায় দু’বছর পর সে কলকাতায় এসেছিল। ২১ দিনের একটা লম্বা ছুটি পেয়েছিল। কিন্তু নিজের বাড়িতে, নিজের পাড়ায়, নিজের চেনা সেই সব গণ্ডির মাঝে ২১টা দিন চোখের পলকে কেটে যায়।
একটু ধাতস্থ হয়ে ল্যাপটপের ব্যাগের চেইনটা খুলল রুদ্র। সেই টিফিন বক্সটা। কলেজের সঙ্গী ছিল রুদ্রর। নাকের কাছে আনতেই সেই চেনা গন্ধটা। নির্ঘাৎ মালপোয়া আছে ভেতরে। দেখি তো! ঠিক, প্লেনের সময়টুকু পার করার জন্য খান আষ্টেক মালপোয়া আর সঙ্গে কিছু নারকেল নাড়ু। একেবারে সাদা ধবধবে। এত জায়গায় এতবার নাড়ু খেয়েছে রুদ্র কিন্তু মায়ের হাতের সেই স্বাদটা যেন আর কোথাও মেলে না। একটা নাড়ু টপ করে মুখে পুড়ল। আহ, এ স্বাদের তুলনা একমাত্র অমৃতের সঙ্গেই হতে পারে। একটু হাসি পেল রুদ্রর। মা পারেও। ঠেসেঠেসে
খাবার খাওয়াবে। সিওর, যা ওয়েট নিয়ে লন্ডন থেকে সে এসেছিল তার থেকে অন্তত সাত কেজি ওজন ওর বেড়ে গিয়েছে। এতদিন পরে মায়ের হাতের স্বাদ, ছাড়া যায় নাকি। আর মা-ও তো ছাড়তো না। রোজই প্রায় দু-তিন রকমের মাছ। আর বলত, ‘ওদেশে কিসব ছাইপাশ খাস কে জানে, এ কদিন একটু প্রাণ ভরে খা তো বাবা। তুই থাকিস না, ভালমন্দ কিছু করতে মনই চাইত না।’
নাহ, এবার বোধহয় লন্ডন গিয়ে রোজ ওইসব ‘ছাইপাশ’ আর খেতে হবে না। মাকে না বলে একটা জিনিস রুদ্র বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। মায়ের হাতের একটা রান্নার খাতা। মায়ের বরাবরই রান্নায় খুব শখ। আর এখন তো তিনি এক্সপার্ট। এই খাতাটা আর মায়ের লাগবে না। এতসব ভাবতে ভাবতেই রুদ্রর চোখ গেল সামনের একটা বুকস্টলে। আরে, এ মাসের হ্যাংলা বেরিয়ে গেছে। মা তো খুব বলে এই ম্যাগাজিনটার কথা। কভারটা তো দারুণ। রুদ্র উঠে বুকস্টলে গিয়ে হাতে তুলে নিল মে মাসের হ্যাংলা। আরে এটা তো মাদার্স ডে স্পেশাল- ‘মায়ের হাতের ম্যাজিক’। এতো দারুণ প্রাপ্তি। মায়ের রান্নার ডায়েরি আর হ্যাংলা স্পেশাল ‘মায়ের হাতের ম্যাজিক’ লন্ডনে বিলেতি খাবারগুলোকে বলে বলে গোল দেবে। কিনে নিল ম্যাগাজিনটা। একটা জায়গায় বসে এক এক করে উল্টোতে শুরু করল হ্যাংলার পাতাগুলো। আর চোখের সামনে হাজির হল মায়ের হাতের এক গুচ্ছ রান্না।
রুদ্রর সঙ্গে আমরাও দেখে নিই কী আছে এবারের মাদার্স ডে স্পেশাল হ্যাংলায়। শুরু শেফ দেবাশিস কুণ্ডুকে দিয়েই। মজার কথা হল প্রতিবার দেবাশিসদা রান্না করলেও এবারের রান্নাগুলো ওর মায়ের করা। ইলিশের ডিমের পাত পাতুরি, পটলের দোলমা ভাজা, পান্তুয়া-র মতো দারুণ পাঁচটা রেসিপি। আর সবই তৈরি করা যাবে খুব সহজেই। কোনও ঝামেলাই নেই। এবার হ্যাংলা ক্লাবের সদস্যারাও রেঁধেছেন তাদের মায়ের হাতের স্পেশাল ১০-টা রান্না। কেউ রাঁধলেন সেই চেনা আলুদেওয়া ছুটির দিনের মাংস তো কেউ বানালেন গন্ধরাজ লেবু দিয়ে তেলাপিয়া মাছ। উফ, রেসিপিগুলো দেখলেই কেমন জিভে জল চলে আসছে। মায়ের হাতের মাংসটাও তো ঠিক এরকমই দেখতে হত। গরম ভাতে মেখে খেতে যা লাগত না! এই একটা রান্না ছাড়া রোববারটা কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে লাগত। মজাদার একটা স্টোরি আছে এবারের হ্যাংলা। আমাদের টেলি পর্দার জনপ্রিয় মায়ের হ্যাংলার পাঠকদের জন্য রাঁধলেন বেশ কয়েকটা পদ। দেখে মনে হবেই যে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। এবারের হ্যাংলা গল্প শোনাবে মায়েদের হোম ম্যানেজমেন্টের। আর গল্প বলছেন যে সে কেউ না, নিজেদের ছেলেবেলায় ফিরে এই গল্প বলছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্য, ঝুলন গোস্বামী এবং লোপামুদ্রা মিত্র। থাকছে জি বাংলার রান্নাঘর-খ্যাত সুদীপা মুখার্জির পাঁচ রেসিপি, যাদের অনুপ্রেরণায় আজ রান্নায় এতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। এমনই পাঁচ মায়ের অনুপ্রেরণার কাহিনি বললেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় রন্ধন বিশেষজ্ঞা আলপনা হাবিব, সঙ্গে থাকল তাঁর পাঁচ মায়ের রান্না।
যা গরম পড়েছে তার জ্বালা বোধহয় মিটবে মিঠে আমের স্বাদেতেই। তাই হ্যাংলার কয়েক পাতা জুড়ে মিঠে আম দিয়ে তৈরি মিঠে আমের মেইন কোর্স ডিশে। এবছর কাজী নজরুল ইসলামের ১২৭তম জন্মবার্ষিকী। আর তাই ওপার বাংলা থেকে বিদ্রোহী কবির খাদয়বিলাসের কথা লিখে পাঠালেন ওনার পৌত্রী খিলখিল কাজী। ও হ্যাঁ, আরও একজন স্পেশাল ম্যান কলম ধরলেন হ্যাংলার পাতায়। কে জানেন? গৌতম গম্ভীর। আরে আইপিএল চলছে তো। আর হ্যাংলার কেকেআর স্পেশাল কিছু থাকবে না তা আবার হয় নাকি। তাই ক্যাপ্টেন গম্ভীর জানালেন কলকাতায় তার ঠিক কোন কোন খাবার পছন্দ। শুধু কি তাই? কেকেআর-এর টিম হোটেল আইটিসি সোনার শেয়ার করল গৌতম গম্ভীর, ওয়াসিম আক্রম, জ্যাক কালিস, ব্র্যাড হগ আর সুনীল নারিন-এর ফেভারিট খাবারের রেসিপি।
এবারের হ্যাংলা পুরো জমে গেছে। তাই না? শুধু রুদ্র কেন, সকলেরই দারুণ কাজে লাগবে এবারের হ্যাংলা। আর হ্যাঁ, হ্যাংলা কয়েক মাস ধরে প্রিন্টারঅ্যাকটিভ। ম্যাগাজিনের কিছু পাতা স্ক্যান করলে পৌঁছে যাবেন হ্যাংলার ওয়েবসাইট, রান্নার ভিডিও ও রেসিপি লিঙ্কে। এমনকি আপনার স্মার্টফোনে ডাউনলোডও করতে পারবেন কিছু রেসিপি। এর জন্য আপনাকে বেশি কিছু করতে হবে না। শুধু আপনার স্মার্টফোনের প্লেস্টোরে গিয়ে ডাউনলোড করতে হবে anderson অ্যাপটি। ব্যাস তারপর শুধু ক্লিক করুন হ্যাংলার পাতা।