Editorial : পৃথিবীর সেরা শেফ

16 Oct 2024 | Comments 0

খুকু পাত্রকে দেখলে অদ্ভুত একটা গর্ব অনুভব হয়। স্টার প্লাসে ‘আমুল মাস্টারশেফ কিচেন কে সুপারস্টার’ যাঁরা দেখেন, তাঁদের সবাই বোধহয়। খুকুকে দেখে বাড়তি অনুপ্রেরণা পান। দিল্লির এক বাঙালি মেয়ে। লেখাপড়া জানা নেই, প্রথাগত শিক্ষাও নেই। অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করা এই মেয়ে এই মুহূর্তে সত্যি ভারতের সব ক’টা রান্নাঘরে রীতিমতো সুপারস্টার। রান্নার প্রতি নিখাদ ভালবাসা থেকে কতকিছু করা যায়, খুকু প্রতিদিনই দেখিয়ে যাচ্ছেন গোটা দেশকে। কিচেন অ্যাপ্রনটা গায়ে জড়িয়ে মাস্টারশেফের কিচেনে দাঁড়ালেই যেন ওঁর গোটা বডি ল্যাঙ্গোয়েজটাই বদলে যায়। সারল্য, গর্ব, বুদ্ধি, আত্মবিশ্বাস সব মিলিয়ে সে এক অদ্ভুত বিজয়িনী। এমনিতেই মাস্টারশেফের গোটা ফরম্যাটটা একটা ফুটবল ম্যাচের মতো। রীতিমতো উত্তেজনায় কাঁপতে হয়। টিভির পর্দায় একজন রান্না করবেন, আরেকজন সেগুলো চেখে দেখবেন, কিন্তু উত্তেজনায় টিভি রিমোটে হাত রাখতেই পারবেন না আপনি। সেখানে বঙ্গকন্যা খুকু যেন এবারের মাস্টারশেফ ইন্ডিয়ার বাড়তি আকর্ষণ। রান্না, শুধু রান্না দিয়ে কত মানুষের হৃদয় জয় করা যায়, মাস্টারশেফে প্রতিদিন বুঝিয়ে যাচ্ছেন খুকু।
আমার মনে হয়, মাস্টারশেফ খুকুর মতো আরও অনেক মানুষকে নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করছে, আত্মবিশ্বাসী করছে। ভাল রান্না যে কোনও একজনকে এভাবে সুপারস্টারের মর্যাদা দিতে পারে, মাস্টারশেফের আগে বোধহয় কেউ অনুমান করতে পারেনি। মাস্টারশেফ ইন্ডিয়া যে অনুষ্ঠানের অনুকরণে তৈরি করা হয়ে থাকে, তা হল মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া।
বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলোর সৌজন্যে এ-সব অনুষ্ঠানই ভারতের মাটিতেও প্রচণ্ড জনপ্রিয়। বেশ মনে আছে, প্রথমবার মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া দেখে চমকে গেছিলাম। আউটডোরে ফেলা হয়েছে বিশাল একটা সেট। তার মাথায় উড়ে এল একটা হেলিকপ্টার। সেখান থেকে একটা বড় ফিশিং নেট ফেলা হল মাটিতে। ওই নেটেই রয়েছে যাবতীয় উপকরণ। প্রতিযোগীদের রান্না করতে হবে এই উপকরণ দিয়েই। অস্ট্রেলিয়ান মাস্টারশেফ যে দু’জন শেফ উপস্থাপনা করেন, তাঁদের একজন গ্যারি মেহিগান আর একজন গ্যারি কলম্বারিস। কিছুদিন আগে মেহিগানের একটা সাক্ষাৎকার পড়ছিলাম। মেহিগান জানাচ্ছেন, অস্ট্রেলিয়ান মাস্টারশেফের এখনও অবধি প্রায় ৭০ জন প্রতিযোগীর মধ্যে বড়জোর চার অথবা পাঁচজন এখন আর কুকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত নন। বাকিদের মধ্যে অন্তত ৫-৬ জন নিজস্ব রেস্তোরাঁ খুলে ফেলেছেন। এক চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগী নিজে রান্নার বই লিখেছেন। যার আড়াই লাখ কপি ইতিমধ্যেই নিঃশেষিত।
মাস্টারশেফ ইন্ডিয়ার প্রভাব হয়ত এভাবেই ভবিষ্যতে আমরা দেখতে পাব। খুকু পাত্রকে হয়ত পাব দিল্লি কিংবা কলকাতায় নিজস্ব স্পেশালিটি রেস্তোরাঁ নিয়ে, কে বলতে পারে! অবাক হওয়ারও কিছু নেই!
‘ফুড’ আসলে কী। খাবার হল বিশেষ এক পরিবেশে এক বিশেষ স্বাদের অভিজ্ঞতা। যাঁরা এই বিষয়টা যত ভাল বোঝেন, তাঁরা মন জয় করে নেন তত ভালভাবে। প্রথাগত শিক্ষারও দরকার হয় না। দরকার মৌলিকত্ব আর নতুন নতুন সৃষ্টির অদম্য ইচ্ছা।
ফক্স টিভিতে ফুড সাফারিও নিশ্চয়ই অনেকে দেখেছেন। গোটা পৃথিবীর নানা দেশের, নানা প্রান্তের খাবার খুঁজে বেড়ান ফুড সাফারির হোস্ট “মিভ ও মিরা”।
“মিভের” এক সাক্ষাৎকারে ঠিক এই কথাটাই দেখছিলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন রেস্তোরাঁর নামী শেফদের দেখছি, নিজেদের বাড়ির রান্না করতে কিংবা শেখাতে গিয়ে চোখ চকচক করে। হ্যাঁ ওটাই আসল। ওতেই মৌলিকতা, ওতেই শিকড়ের সন্ধান। পৃথিবীর সব সেরা শেফরা বসে আছেন আমাদের সবার বাড়িতে, আমাদের মায়েরা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হ্যাংলা শো-কেস

সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের অনলাইন স্টোরে আপনাকে স্বাগতম

1
Latest Magazine